নতুন ছাদ বাগান তৈরির সঠিক উপাই ।
আজকে আমরা জানবো কিভাবে আমরা ১০ টি ধাপে একটি সুন্দর ছাদ বাগান তৈরি করতে পারি ।
১. সুস্থ চারা সংগ্রহ
সফল বাগানি হতে হলে আমাদের সর্ব প্রথম নার্সারি থেকে সুস্থ চারা নির্বাচন করতে হবে ।চেস্টা করতে হবে আমরা যেই চারা টি কিনবো তার যেন একটির বেশি ডাল থাকে এবং ভাল ভাবে দেখে নিতে হবে যে , চারাটির পাতা গুল যেন কোঁকড়ানো বা পোকাই খাওয়া না হয়।
দ্বিতীয়ত ছোট চারা গাছ সংগ্রহ করতে হবে, কারন ছোট চারা গাছগুলো দ্রুত মাটিতে সেট হয়ে যায় এবং বড় চারা গাছগুলো তুলনামূলক বেশি সময় লাগে মাটিতে সেট হওয়ার জন্য, সেই জন্য আমাদের সবসময় ছোট চারা গাছ নির্বাচন করা উচিত।
২. সঠিক টব নির্বাচন
সঠিক সাইজের টব নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ,কারণ গাছের তুলনায় টবের আকার বেশি বড় হয়ে গেলে গাছ তখন বেশি মাটি পেয়ে শিকড়ানোর দিকে মন দেয় এর ফলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায় । আবার গাছের প্রয়োজনের তুলনায় ছোট টবে গাছ লাগালে, সে ক্ষেত্রেও গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় । এইজন্য ছোট গাছকে সরাসরি বড় টবে না বসিয়ে প্রথমে ছোট তারপর আরেকটু বড় এবং একদম শেষে ফাইনাল টবে বসানো উচিত। গাছটি টবে বসানোর পূর্বে অবশ্যই টবের নিচে একটি জল নিকাশি ছিদ্র তৈরি করে নিতে হবে, কারণ অনেক সময় টবে পানি জমে থাকার কারণে গাছের শিকড় পচে যায় এবং অনেক সময় এর কারণে গাছটি মারাও যায়। জল নিকাশি থাকলে এ পানি টবের নিচ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে।৪. ধৈর্য এবং অপেক্ষা
একটি নতুন চারা বাসায় নিয়ে এসে সাথে সাথে টবে লাগানো উচিত নয়। গাছটি যেহেতু নতুন জায়গায় এসেছে সেহেতু তাকে নতুন আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩ থেকে ৭ দিন সময় দেওয়া এবং সে সময়ে নিয়মিত তার পরিচর্যা করা উচিত। এর ফলে গাছ বা চারা টি নতুন আবহাওয়া সাথে মানিয়ে নিতে পারে এবং গাছে মরে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।৫. মাটি তৈরি করা
ভালো ফলন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের গাছের প্রবৃত্তি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের মাটি প্রস্তুত করতে হয়।কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে মাটি প্রস্তুত করে রাখলে তা গাছের জন্য ভালো হয়। এর ফলে গাছ অনেক দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে।৬. গাছের পরিচর্যা
গাছটি লাগানোর পর কমপক্ষে .৩ থেকে.৪ দিন ছায়াময় স্থানে রাখতে হবে এবং তার পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী রোদে রাখতে হবে। গাছে পানি দিতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি দিলে গাছের পাতাগুলো হলুদ হয়ে যায় এবং ঝরে যায় আবার প্রয়োজনের কম পানি দিলেও গাছগুলো শুকিয়ে মারা যায়। এইজন্য গাছের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে সকালে এবং বিকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দেওয়া উচিত। এবং ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পানি টব থেকে শুকিয়ে যাওয়ার পরই পুনরায় পানি দেওয়া উচিত।৭. জৈব সার প্রয়োগ
সঠিকভাবে মাটি তৈরি করার পর গাছ লাগিয়ে, এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত কোন প্রকার সার প্রয়োগের প্রয়োজন না হলেও তারপর থেকে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হয়। বিভিন্ন মৌসুমী ফুল এবং শাকসবজি গাছের ক্ষেত্রে 15 থেকে 20 দিন পরপর গাছের গোড়ায় তরল জৈব সার দিলেই চলে। আবার কিছু দীর্ঘজীবী গাছের ক্ষেত্রে অনেক অন্যান্য উপকরণ এর প্রয়োজন হয় যেমন দম্পদ সার হাড়ের গুড়া ও অনুখাদ্য।৮. গাছের গোড়া পরিষ্কার
দুই থেকে তিন মাস পর পর গাছের গোড়ার আগাছা গুলো পরিষ্কার করে গাছের গোড়ার মাটি গুলোকে খুঁচিয়ে দিলে বা আলগা করে দিলে এর ফলে গাছের ছোট ছোট কিছু শিকড় ছিড়ে গেলেও গাছের মাটিতে এবং শিকড়ের মধ্যে অক্সিজেনের সঞ্চালন ভালো হবে।৯. প্রোনিং বা কাটায়
বড় বা স্থায়ী গাছের ক্ষেত্রে বছরে অন্তত একবার প্রোনিং বা কাটাই ছাটাই করার ফলে গাছের উচ্চতা বৃদ্ধি না পেলেও গাছে অনেক নতুন ডালপালা গজাবে। আবার ছোট গাছেও বেশি ফল বা ফুল পেতে চাইলে প্রোনিং বা কাটায় আবশ্যক। এবং পরবর্তীতে কাটা অংশগুলোতে ছত্রাক লাগিয়ে দিতে হবে।
১০. গাছ ও টব পরিষ্কার রাখা
গাছের গোড়ায় আগাছা পরিষ্কারের পাশাপাশি গাছের অনেক হলুদ এবং শুকনো পাতা থাকে নিয়মিত সেগুলোকে কেটে পরিষ্কার করতে হবে, কারণ গাছ এবং টক যত বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে গাছের গ্রোথ তত বেশি ভালো হবে। অনেক সময় পোকামাকড়ের কারণে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই কারণে নিয়মিত গাছে নিম তেল স্প্রে করতে হবে এর ফলে গাছের পাতায় একটি নিমের গন্ধ থেকে যায় এর ফলে পোকামাকড় গাছ থেকে দূরে থাকে এবং গাছের কোনো ক্ষতি করতে পারে না।এভাবে গাছের সঠিক পরিচর্যা করার মাধ্যমে আমরাও একটি সুন্দর ছাদ বাগানের অধিকারী হয়ে উঠতে পারি।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

Comments
Post a Comment